আপনার ছোট্টটি তার শিক্ষার জগতে প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এটা সাধারণ যে আপনি নিজেকে কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখতে পাবেন। আপনার সন্তানের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের মতো আপনি এখানেও একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেন, কারণ স্কুল আপনার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেও আপনার সন্তানের ভর্তির জন্য যোগ্যতার মূল্যায়ন করবে।
এটি তাদের আপনার সন্তানের পড়াশোনা এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য কী ইচ্ছা তার প্রতি অন্তর্দৃষ্টি দেয়। এটি কি স্কুলের পাঠ্যক্রম এবং অধ্যয়নের জন্য পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্য করে?
নিরাপত্তাই প্রথম
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব সারাবিশ্বে পারিবারিক জীবন তছনছ করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ, বাড়িতে বসে অফিসের কাজ, শারীরিক দূরত্ব রক্ষা -- এমন অনেকগুলো নেতিবাচক বিষয় এখন অভিভাবকদের সামনে। এ অবস্থায় ইউনিসেফের গ্লোবাল চিফ অব এডুকেশন রবার্ট জেনকিন্স বাড়িতে থাকা শিশুদের লেখাপড়ার সাথে সংযুক্ত রাখতে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন।
১. আলোচনা করে লেখাপড়ার সূচি পরিকল্পনা করা
অনলাইন, টেলিভিশন ও রেডিওতে বয়সভিত্তিক যেসব শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, সেগুলো অনুসরণ করতে লেখাপড়ার একটি সূচি বা রুটিন তৈরির চেষ্টা করুন। শিশুর লেখাপড়া ও খেলার জন্য আলাদা সময় রাখুন। দৈনন্দিন কাজেও শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রাখতে পারেন। সম্ভব হলে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করে এসবের পরিকল্পনা করুন।
শিশু ও কিশোর বয়সীদের পক্ষে নির্দিষ্ট একটি সময়সূচি বা কাঠামো মেনে চলা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তাদের বুঝিয়ে বলুন যে, এখন তাদের কিছুটা নমনীয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এরপর তাদের পড়াশোনার কার্যক্রম শুরু করুন। যদি মনে হয়, অনলাইনে লেখাপড়ায় আপনার শিশু মনোযোগী নয় এবং সে ক্ষুব্ধ; তবে আরও কার্যকর এবং বিকল্প কিছু শুরু করুন। ভুলে যাবেন না, একসঙ্গে শিক্ষা পরিকল্পনা করা এবং বাড়ির প্রাত্তহিক কাজে তাদের সম্পৃক্ত করাও শিশুর মানসিক বিকাশেও ক্ষেত্রে একটি কার্যকর পন্থা। তবে যতটা সম্ভব তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখুন।
২. খোলামেলা আলোচনা করুন
শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করুন। পাশাপাশি, আপনার কাছে অনুভূতি প্রকাশে তাদের উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন, মানসিক চাপ অনুভব করলে শিশু ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তাই শান্ত থাকুন এবং তাদের বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুকে ডেকে নিয়ে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা করুন। বোঝার চেষ্টা করুন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তারা কতটুকু জানে এবং কি বলে। এরপর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাসগুলো সম্পর্কে তাদের সাথে আলোচনা করুন। প্রতিদিনই আপনি হাত ধোয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের জোর দিয়ে বলতে পারেন। তবে নিরাপদ পরিবেশে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন এবং শিশুকে স্বস্ফূর্তভাবে কথা বলতে দিন। ছবি আঁকা, গল্প বলা অথবা অন্য কোন কাজ লেখাপড়ার আলোচনা শুরু করতে সহায়তা করতে পারে।
যেসব বিষয়ে শিশুরা উদ্বিগ্ন সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন। তাদের অনুভূতিকে সম্মান করুন এবং নিশ্চিত করুন যে, এসব বিষয়ে ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। আপনি যে পূর্ণমনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছেন, সেটি আপনার অভিব্যক্তিতে তুলে ধরুন। তাদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি করে দিন, যেন তারা ভাবতে পারে যে, পছন্দের যেকোনো বিষয়ে তারা আপনার সঙ্গে অথবা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। ভুয়া খবর বা তথ্য সম্পর্কে তাদের সতর্ক করুন এবং ইউনিসেফের নির্দেশনার মতো বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। বিষয়টি নিজেকেও স্মরণ করিয়ে দিন।
৩. প্রয়োজনীয় সময় নিন
বাড়িতে শিশুর লেখাপড়া শুরু করুন সংক্ষিপ্ত সেশন দিয়ে। পরে আস্তে আস্তে বড় সেশনে প্রবেশ করুন। আপনার যদি ৩০ মিনিট অথবা ৪০ মিনিটের সেশন করার লক্ষ্য থাকে, তবে ১০ মিনিটের সেশন দিয়ে শুরু করে সেখান থেকে বড় সেশনের জন্য তাদের প্রস্তুত করুন। একই সেশনে অনলাইন বা স্ক্রিনে অবস্থানকালীন সময় এবং অফলাইনের কাজ বা অনুশীলন একত্রিত করুন।
৪. অনলাইনে শিশুর সুরক্ষা
শিশুদের লেখাপড়ায় রাখা, খেলায় অংশগ্রহণ ও বন্ধুদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রক্ষায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু অনলাইন সুবিধা শিশুর নিরাপত্তা ও গোপণীয়তা রক্ষায় বড় ঝুঁকিও তৈরি করছে। তাই ইন্টারনেট সম্পর্কে আপনার শিশুর সঙ্গে আলোচনা করুন, যাতে অনলাইনে কীভাবে কাজ করতে হয়, কোন কোন বিষয়ে সাবধানতা প্রয়োজন এবং এই প্ল্যাটফর্মে কি ধরনের আচরণ করতে হয়, যেমন ভিডিও কলে, সেটা তারা শিখতে পারে।
কীভাবে কখন এবং কোথায় ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আপনার শিশুর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ম ঠিক করে নিন। অনলাইনে শিশুদের, বিশেষ করে উঠতি বয়সের শিশুদের ঝুঁকি কমাতে তারা যেসব ডিভাইস ব্যবহার করে সেগুলোতে অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণ বা প্যারেনটাল কন্ট্রোল সেট করে নিন। শিশুদের সঙ্গে নিয়ে একসাথে বিনোদনের জন্য অনলাইনে সঠিক টুলস চিহ্নিত করুন। যেমন, ‘কমন সেন্স মিডিয়া’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বয়স উপযোগী অ্যাপস, খেলা ও অন্যান্য অনলাইন বিনোদনের পরামর্শ দেয়। যদি অনলাইনে নিপীড়নের কোন ঘটনা ঘটে অথবা আপত্তিকর কিছু চলে আসে, তবে বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিন। এজন্য হেল্পলাইন ও হটলাইন নম্বর হাতের কাছেই রাখুন।
মনে রাখবেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেখাপড়ার জন্য শিশু বা উঠতি বয়সি শিশুদের তাদের নিজেদের ছবি অথবা অন্যদের ব্যক্তিগত তথ্য দেখানোর কোনো দরকার নেই।
৫. শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
শিশুর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা, স্কুলের বিভিন্ন তথ্য প্রাপ্তি, কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন পড়লে অথবা বিভিন্ন নির্দেশনা জানতে স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখবেন তা খুঁজে বের করুন। বাড়িতে থেকে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে মা-বাবা অথবা অভিভাবক গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাও ভালো সমাধান হতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অভিভাবকদের জন্য আরও পরামর্শ বা টিপসের জন্য ভিজিট করুন: পরিবার ও সেবাদানকারীদের জন্য পরামর্শ